যৌন রোগ পর্ব -৫ , মাইকোপ্লাজমা জেনিটেলিয়াম ( STI Part-5 : MYCOPLASMA GENITALIUM )

মাইকোপ্লাজমা জেনিটেলিয়াম কি ?

ইহা একটি ক্ষুদ্র প্যাথজেনিক মাইকোপ্লাজমা ব্যাকটেরিয়া নামক জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত একটি যৌন রোগ , যা মুখ গহব্বর, প্রস্রাবের রাস্থা , মহিলাদের জরায়ুর মুখ , মুখ গহ্বর , পায়ুপথের পাথলা ঝিল্লীর আবরণীকে খুব সহজেই আক্রমন করে ।
কিভাবে আক্রমণ করে ঃ
মাইকোপ্লাজমা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি ২ থেকে ৩৫ দিনের সুস্থ কারও সাথে যৌন মিলন করে, তখন সুস্থ ব্যাক্তির দেহে তা সংক্রামিত হয়ে থাকে প্রথম লক্ষন হিসাবে শুধু প্রস্রাবের জ্বালা জ্বালা যন্ত্রণা ও চুলকানো দেখা দিয়ে থাকে যা পরবর্তীতে প্রদাহ সহ অন্যান্য লক্ষন দেখা দেয় বা ৬৫% বেলায় বেশ কিছুদিন কোন লক্ষন দেখা নাও দিতে পারে ( নিরভর করে উক্ত ব্যাক্তির এলারজিক ইন্টলারেন্সের উপর ) – সে জন্য প্রস্রাবের জ্বালা- যন্ত্রণার লক্ষন দেখা দেওয়া রোগিদের বেলায় ৬৭% ক্ষেত্রে এই জীবাণুর সংক্রামণ হতে পারে মনে করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা ।
কাদের বেশী হয় ?
মুলত পরকীয়া নারীপুরুষ এবং ভাসমান পতিতাদের এই অসুখটি বেশী দেখা যায় ( নারী ১৬-১৯ এবং পুরুষ ২৫-৩৪ ) এবং তাদের কাছ থেকে সুস্থ স্বামী অথবা শ্রী আক্রান্ত হয়ে থাকেন । অসুখ টি ক্যাটাগরি-বি এর অন্তর্ভুক্ত থাকায় ভাল এন্টিবায়োটিক সেবনে তা সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্বভ ।
লক্ষন ঃ

যখন কোন পুরুষের প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া দেখা দেয় ( urethritis ) তখন যদি তা গনরিয়া অথবা শ্যালামিডিয়া জনিত কারনে না হয় তা হলে মাইকোপ্লাজমা জেনিটেলিয়ামে সংক্রামিত লক্ষন বলেই চিকিৎসকরা ভেবে থাকেন ( সঠিক ডায়াগনোসিসে ১০০% নিশ্চিত হওয়া সম্বভ )
পুরুষের বেলায় ঃ

মুত্র নালী থেকে পাতলা সাদা স্রাব বের হওয়া ( গনরিয়ার বেলায় তা ঘন থাকে ) – প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবের রাস্থায় জ্বালা যা মূত্রনালি থেকে মুত্র বের হওয়ার সময় জ্বলে জ্বলে নামতে থাকে মনে হয় এবং প্রস্রাব শেষ হওয়ার পর চুলকানোর সাথে টনটনে ব্যাথা থাকে ।- সেই সাথে অজানা বাত জাতীয় ব্যাথা ( বিশেষ করে শরীরের জয়েন্টগুলোতে ফোলা ও ব্যাথা দেখা দেয় ) দেখা দেয় ।
মহিলাদের বেলায় ঃ

যোনি তে চুলকানি, মুত্র ত্যাগ করার সময় জবালা-পোড়া এবং কনকনে ব্যাথা বা যৌনমিলনের সময় ব্যথা দেখা যেতে পারে ও সেই সাথে সিল্পটমেটিক ভাবে অন্যান্য অসুবিধা দেখা দিতে পারে ( মনে রাখবেন জীবাণু সংক্রামণের বেলায় অনেকের এই সব লক্ষণ দেখা না দিয়ে অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পর , তা দেখা দিতে পারে )
অসুখটি পুরাতন হলে ঃ- যোনির ভিতরের প্রদাহ এবং লালচে দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব সহ লাল বর্ণের গলিত ফুসকুড়ির মত প্রদাহ দেখা দেয় । সেই সাথে –
জরায়ুর মুখের প্রদাহ অথবা ডিম্বনালির প্রদাহ দেখা দেয় (PID) । সে জন্য বিনা কারনে গর্ভপাত অথবা অসম্পূর্ণ প্রসব দেখা দিতে পারে । যদি কোন কারনে গর্ভপাত না হয় তাহলে সন্তান প্রসবের আগ থেকেই প্রসব ব্যাথায় ভুগতে থাকে – গবেষণা অনুসারে দেখা যায় উক্ত ভুমিস্ট শিশু জন্ম থেকেই শীর্ণ অবস্থায় বড় হতে থাকে ।
মাইকোপ্লাজমা জেনিটেলিয়াম অসুখে আক্রান্তের ৩য় স্থরে , মহিলাদের ৭১% বেলায় বন্ধ্যাত্ত দেখা দেয় ( মেডিক্যাল সাইন্সের সুত্র অনুসারে গর্ভপাত যদি ১৮ মাসের ভিতর ৩ বারের বেশী হয় তাহলে উক্ত মহিলা স্থায়ভাবেই বন্ধ্যাত্ত দেখা দেয় )। সেই সাথে সারাজীবন ই পেলভিক জাতীয় অসুখে ভুগে থাকেন যা যৌন মিলনের সময় একটু বৃদ্ধি পায় । একি সাথে মেনোরিয়া জাতীয় অসুখ ( ঋতু স্রাবের সময় বৃদ্ধি পাওয়া যা বন্ধ হতে চায়না মনে হওয়া ) সহ সময়ের আগেই মেনোপেজ দেখা দেয় ( মাসিক ঋতু স্রাব চিরস্থায়ী বন্ধ হওয়া ) । এ ছাড়া ওভারিয়ান অথবা ইউটারিন ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি তো আছেই ।
পরীক্ষা নিরীক্ষা ঃ

PCR (polymerase chain reaction) প্রস্রাব থেকে অথবা লিঙ্গ বা যোনির স্রাব কালচার করে জীবাণুটির উপস্থিতি নিখুত ভাবে ধরা সম্বভ – সেই সাতে অন্যান্য যৌন সংক্রামক জীবাণু থাকলে তাও ধরা পরে ।
চিকিৎসা ঃ

( সতর্কবাণী ঃ রেজিঃ চিকিৎসকের পরামর্ষ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার সম্পূর্ণ নিষেধ এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত অসুখ বিধায়, এন্টিবায়োটিক ছাড়া চিকিৎসা করা মানেই নিজের অসুখটাকে ঝিয়ে রাখা ! )
যদি ও ১ গ্রাম আয়াজিথ্রোমাইসিন ( azithromycin ) সেবনে তা সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে আসলে ৫০% বেলায় তা রেজিস্ট্যান্স হয়ে পরে বিধায় দৈনিক ২৫০মিগ্রাঃ- ৫০০ মিগ্রাঃ করে ৪ দিন সেবন করলে ৭৫% বেলায় সম্পূর্ণ ভাল হওয়ার কথা – যদি অ্যাজিথ্রোমাইসিন রেজিস্ট্যান্স হয় তাহলে —মক্সিফ্লোক্সাসিলিন ( Moxifloxacin ) ৪০০ মিগ্রাঃ করে ৭ দিন থেকে ১৪ সেবন করে ৮৫% বেলায় সুস্থ হওয়া সম্বভ ।
তারপর ও যদি সুস্থ না হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ক্লিনিক্যাল অভাজারভেশনে রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্ষে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিৎ ।
সাথে অন্যান্য লক্ষনের উপর বিবেচনা করে ক্রিম, জেনিট্যাল ওয়াস ও অন্যান্য ঔষধ সেবন করার পরামর্ষ দেওয়া হয়ে থাকে । মহিলাদের বেলায় যদি পি আই ডি অসুখ থাকে তাহলে ২১ দিন পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় ।
আক্রান্ত ব্যাক্তির যৌন সাথীকে অবশ্যই প্রতিষেধক হিসাবে আজেথ্রোমাইসিন সেবন করতে হবে এবং একি সাথে ঔষধ সেবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যৌনমিলন না করাই সবচেয়ে ভাল – ( যদি ও কনডম ব্যাবহারে সেইফ সহবাস বলা হয় )
প্রতিকার ঃ-

No comments:
Post a Comment