shaharpar

Sunday, 15 January 2017

পরিপাক তন্ত্র -পর্ব ১ ( ফিজিওলজি অনুসারে ) —-Digestive System —

আমরা প্রত্যহ ভাত, মাছ, মাংস , রুটি ইত্যাদি খাবার খাই কিন্তু তা কীভাবে পরিপাক হয়ে আমাদের শরীরের কাজে লাগে এবং অপ্রয়োজনীয় অংশ বর্জ্যপদার্থ হিসাবে নিষ্কাশন হয় – এ ছাড়া ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে যে কোন ধরনের সমস্যা হলে প্রাথমিক ভাবে নিজে নিজেই অনেকটা বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারেন – তার আগে আমি মনে করি কিছু বিষয় বুজার দরকার , তাই তুলে ধরলাম —-
 হাঁ প্রশ্ন আসবেই আমরা কি কারনে খাবার খাই ? হা খাবার মুলত ৪টি বিশেষ কারনেই খেয়ে থাকি।
 ১। শারীরিক গঠনের জন্য – প্রোটিন, মিনারেলস জাতীয় খাদ্য।
 ২। দৈহিক শক্তির জন্য – কার্বহাইড্রেড, ফ্যাট জাতীয় খাদ্য।
 ৩। জীবন রক্ষাকারী বা রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য – ভিটামিন, মিনারেলস জাতীয় খাদ্য।
 ৪। রেগুলেটরি বা খাবার হজম করার জন্য খাদ্য – পানি ও অন্যান্য তরল খাদ্য।

ডাইজেস্টিভ সিস্টেম


পৌষ্টিকতন্ত্র বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কি ? মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যনালী এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গ সমবায়ে মানব পরিপাকত্তন্ত্র গঠিত যার মূল কাজ খাদ্য পরিপাক করা। ইহাকেই digestive system বা পৌষ্টিকতন্ত্র বলা হয় ।

১. মুখগহবর (Mouth Cavity )
tong
আমাদের ভুক্তদ্রব্যের প্রথম পরিপাক শুরু হয় মুখগহবর থেকে ৷দাঁত ও চোয়াল বড় খাদ্য টুকরা চিবিয়ে ছোট কণায় পরিণীত হওয়ার পর তা লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা খাদ্যকণাকে নরম করে । তখন খাদ্য সমুহ জিহ্বা নড়াচড়া করিয়ে খাদ্যে ও সঙ্গে লালা রসকে উত্তমরুপে মিশ্রিত করে যা পিচ্ছিল হয়ে খুব সহজে অন্ননালি দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছায় ।
জিহ্বার উপরিভাগ স্তরী ভূত আঁইশাকার আবরনী কলা দ্বারা আবৃত থাকে । যা দেখতে ছোট ছোট গুটির মত – ( প্যাপিলা ) এই প্যাপিলাতে অসংখ্য স্বাদ কোরোক বা টেস্ট বাড সাজানো থাকে এবং এর ধারাই আমরা যে কোন খাবারের ভাল মন্দ স্বাদ পেয়ে থাকি । ( প্যাপিলা তিন প্রকার সাধারনত সারকামভ্যালেট ও ফাঞ্জিফর্ম প্যাপিলা থেকেই জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টতা ,পশ্চাত ভাগে তিক্ত । দুপাশে অম্ল ও মধ্য ভাগে লবনাক্ত স্বাদ্ গ্রহনের সাধ পেয়ে থাকি )
জিহ্বায় তিন ধরনের গ্রন্থী থাকে –মিউকাস ক্ষরণকারী গ্রন্থী , সেরাস গ্রন্থী ও লসিকা গ্রন্থী । লসিকা গ্রন্তিগুলি মিলিতভাবে জিহ্বার পিছন দিকে লিঙ্গুয়াল টনসিল গঠন করে

হজম প্রক্রিয়ার শুরু জিহ্বার নিছে থাকা স্যালাইভারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা থেকেই । এই লালা হচ্ছে প্রথম পরিপাক রস৷ দৈনিক গড়ে ৮০০-১৫০০ মি.লি. লালা নিঃসৃত হয় ৷ লালারসে থাকে পানি, খনিজ লবন, স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ, টায়ালিন, মিউকাস, লাইসোজাইম, ইমিউনোগ্লোবিউলিন্স এবং ব্লাড ক্লোটিং ফ্যাক্টর ৷ স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ অ্যানজাইম শর্করা খাদ্যের রাসায়নিক ভাঙ্গন ঘটায় ৷ উক্ত অ্যানজাইম বহুশিকল যুক্ত সিদ্ধ শর্করা (ভাত, রুটি, আলু) কে রাসয়নিক ভাবে ভেঙ্গে দ্বি-শিকল যুক্ত শর্করা তথা ডেক্সট্রিন ও ম্যালটোজ এ পরিণত করে ৷
লালারসের কাজ ঃ-লালারসের কাজ হচ্ছে জীবাণুর আক্রমণ থেকে দাঁত ও মুখগহবরকে রক্ষা করা ৷ আমাদের মুখে প্রচুর সংখায় প্যাথনিক ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে ৷ এই ব্যাকটেরিয়া সহজেই মুখের কোষকে ধ্বংস করেদিতে পারে এবং দন্ত ক্ষয় করতে পারে ৷ তবে সর্বদাই মুখে অল্প পরিমানে লালা নিঃসরণ হয় বলে তা জীবাণুর আক্রমন থেকে দাঁত ও মুখকে রক্ষা করে ৷ লালারসে বিদ্যমান লাইসোজোম ও থায়োসায়ানেট আয়ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ৷ এছাড়া লালারসে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবডি থাকে যা দন্ত ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়াকে সরাসরি মেরে ফেলে ৷ মুখের লালারসে থাকে Streptococcus Saliverin নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ৷ এরা মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে দেয়না ৷

লালারস নিঃসরণ প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু তথা সিমপ্যাথেটিক ও প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ৷ কোন খাবার দেখলে, ঘ্রাণ নিলে বা খাবার বিষয়ে কল্পনা করলে প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু লালাগ্রন্থিকে উত্তেজিত করে লালারস নিঃসরণ বাড়ায় ৷

টক বা অম্লাত্তক খাবার দেখলে জিহ্বায় কেন পানি আসে ? – যেকোনো টকজাতীয় খাবার দেখলেই জিবে পানি আসে, কারণ তা আমাদের স্যালিভা স্যাকরেশন বাড়ায়। অর্থাৎ জিবে যে লালা থাকে তার নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে জিবে পানি অনুভুত হয়। তবে , ( মিস্টি/তেতুল/ লবণাক্ত ) যদি উক্ত খাবার সম্মন্ধে ধারণা না থাকে তা হলে জিহবা দিয়ে পানি আসবেনা ) মূলত তা সিমপ্যাথেটিক ও প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর আবেগ জনিত ক্রিয়ার ফলে লালারস নিঃসৃত হয়ে থাকে ।

অন্ননালি (Oesophagus)-
oesop
এটি মাংসপেশীর তৈরী প্রায় ২৫ সে: মি: লম্বা নালি বিশেষ এবং ইহা কার্টিলেজ হতে পাকস্থলীর কার্ডিয়াক অরিফিস পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে গ্রন্থি রস জনিত গুরুত্ব পূর্ণ তেমন কোন ভুমিকা নাই তবে সুন্দর একটা ফাংশন এতে আছে – আমরা খাবার খাওয়ার পর অন্ননালী দিয়ে যাওয়ার পর পাকস্থলীর কার্ডিয়াক স্ফিংক্টারটি পাকস্থলী হতে পাচক রস উল্টা পথে (অন্ননালি) পথে আসতে বাধা প্রদান করে ৷ ( টিউবওয়েলের ওয়াসারের মত ) – শ্বাস নালীর পিছনে খাদ্য নালির অবস্থান বিধায় বাহির থেকে শ্বাসনালীই দেখা যায় -মজার বিষয় হচ্ছে যখন আমরা কোন খাবার মুখে দেই ঠিক তখনি শ্বাসনালীর মুখ ঢেকে রাখে সফট প্লেইটের মাধ্যমে । যার ফলে খাদ্য শ্বাসনালীতে যেতে পারেনা । যদি কোন কারনে খাবারের কিছু অংস শ্বাসনালীতে ঢোকে পরে তাহলে সাথে সাথে মারাত্মক কাশি চলে আসে এবং তা বাহির না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে – সে সময় উচিৎ কিছু পানি পান করে কয়েক মিনিটের জন্য খাবার না খাওয়া —

পাকস্থলী (Stomach)
stomach


পাকস্থলী (Stomach)-:-  পাকসস্থলি দেখতে ইংরেজি জে বর্ণের মত এবং অন্ননালির কার্ডিয়াক স্ফিংক্টার হতে শুরু করে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ ডিওডেনাম পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ এর প্রধান তিনটি অংশ যথা:- ফান্ডাস, বডি, পইলোরাস ৷
পাকস্থলী জেপার এর মত কাজ করে ৷ পাকস্থলীতে খাদ্য চুর্ণ বা গুড়ো করে পাচক রসের সাথে মিশে জির্ণ মণ্ড তৈরী করে এবং সেই খাদ্য পাইলোরিক ষ্ফিংক্টার দিয়ে অল্প অল্প করে মন্ড সমুহ ডিওডেনামে পৌছে ৷ পাকস্থলীতে খাদ্য ভালভাবে মন্ড না হওয়া পর্যন্ত পাকস্থলীর নিছের মুখ ঠিকমত খোলে না এবং মন্ড সমুহ ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করতে প্রায় ৩-৫ ঘন্টার মত সময় লাগে ৷

পাকস্থলীর পাচক রসে কি কি থাকে ঃ
পাকস্থলীর গ্রন্থি কোষ হতে গড়ে প্রতিদিন ২-৩ লিটার পাচক রস উৎপাদিত হয়, যাকে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থীর রস বা পাচক রস বলা হয় ৷ এতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও কয়েক ধরনের অ্যানজাইম বিদ্যমান ।
যেমনঃ  পাকস্থলীর গ্যাষ্ট্রিক গ্রান্থি প্যারাইটাল কোষ হতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ করে
( যা হাইড্রোজেন পটাশিয়াম এ, টি, পি, এস এর ক্রিয়ায় H+ I CL+ আয়ন+ HCL অ্যাসিড তৈরি হয় )
পেপটিক গ্রন্থি থেকে -পেপসিন বা পেপসিনোজেন নিঃসরণ করে – আরজেন্টাফিন গ্রন্থি থেকে – স্থানীয় হরমোন উৎপাদন করে ( গ্যাস্ট্রিন, এন্টারোগ্যাস্ট্রোন ইত্যাদি ) । পাইলোরিক গ্রন্থি থেকে গ্যাষ্ট্রিন হরমোন তৈরী হয় এবং ডি কোষ থেকে সোমাটোসটেটিন হরমন নি:সৃত হয় মূলত এই গ্যাষ্ট্রিন ও এন্টারোগ্যাস্ট্রোন হরমোনের নিয়ন্ত্রণ যে কোন ভাবে করতে পারলেই হাইপার এসিডিটি বা বুক জ্বালা পোড়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে রাখা সম্বভ
এবং মনে রাখবেন এই হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খুব শক্তিশালী একটি জীবাণু নাশক বা পাকস্থলীতে অবস্থিত পেপসিন ও গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ উৎসেচক এর প্রভাবে যথাক্রমে প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের আংশিক পরিপাকে সাহায্য করে থাকে । এরপরেই HCl খাদ্যকে এসিডিক করে খাদ্য ডিওডেনামে চলে যায় । ডিওডেনাম ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ ।

ক্ষুদ্রান্ত্র ( Small Intestine )

small in t 2
পরিপাক তন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষুদ্রান্ত্র – যেখানে খাদ্য এবং মিনারেল পরিপাক এবং শোষণ হয় এবং স্নেহজাতীয় খ্যাদ্যের পরিপাক ক্ষুদ্রান্তে শুরু হয়।
ইহা ও প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত :- ডিওডেনাম,জেজুনাম ও ইলিয়াম এবং আমাদের অধিকাংশ খাদ্যের পুষ্টি (nutrient) ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনাম অংশে শোষিত হয় । ক্ষুদ্রান্ত্র।দৈর্ঘ্য-৬-৭ মিটার ,প্রস্থ ৩.৫ থেকে ৪.৫ সেমি এবং দেখতে ইংরেজী U অক্ষরের মত ।
ডিওডেনামের পরিপাকঃ খাদ্য বস্তু ডিওডেনামে প্রবেশ করার পর অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত অ্যামাইলেজ শ্বেতসারকে মলটোজে ও মলটোজকে মলটেজ ও গ্লুকোজে পরিনত করে। এর পর খাদ্য ইলিয়ামে চলে আসে।
ক্ষুদ্রান্ত্রের নালীর ভিতরের মিউকাস স্তর দেখতে অসংখ্য আঙ্গুলের মত প্রক্ষেপ বা ভিলাই (Villi) থাকে যা শরীরের শোষন ক্ষ্যামতার কাজ করে ( কার্বোহাইড্রেট, প্রোটেন ও ফেট ) । এবং শোষনে সাহায্য করে । প্রতিটি ভিলাইয়ের এর ভিতরে লসিকা থাকে এবং লসিকা বাহকে ঘিরে রাখে রক্ত জালক । ক্ষুদ্রান্ত্রের পাচিত খাদ্য শোষিত হয়ে লসিকার ভিতর ।
ইলিয়ামে পরিপাকঃ খাদ্য জেজুনাম থেকে ইলিয়ামে প্রবেশ করে আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত সুক্রেজ এর মাধ্যমে সুক্রোজ গ্লুকোজ+ফুকটোজ=ল্যাকটোজে পরিনত হয়। আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ল্যাকটেজের মাধ্যমে ল্যাকটোজ গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজে পরিনত হয়
ক্ষুদ্রান্ত্রের কাজ-
ক্ষুদ্রান্ত্র আন্ত্রিক রস ক্ষরণ করে কার্বোহায়ড্রেট,প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পাচনে অংশ নেয়।এছাড়া যকৃত নিঃসৃত পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত অগ্নয়াশয় রসও ক্ষুদ্রান্ত্রেরে খাদ্য বস্তুর পাচন ঘটায় –তাই ক্ষুদ্রান্ত্র হল গৃহীত খাদ্যবস্তুর মুখ্য পাচন স্থল।
ক্ষুদ্রান্ত্রের কাজ হচ্ছে খাদ্য হজম করা এবং তা শোষণ করা ৷ এ-ছাড়াও পানি, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শোষণ করা ৷ ক্ষুদ্রান্ত্রের ইমিনোজিক্যাল, মেকানিক্যাল, অ্যানজাইমেটিক এবং পেরিষ্টালটিক ক্রিয়ার দ্বারা ভুক্ত খাদ্যের যে কোন বিষাক্ত উপাদান থেকে অন্ত্রকে রক্ষা করা ৷
ক্ষুদ্রান্ত্র রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে (শর্করা শোষনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকায় , সুস্থ মানূষের শর্করা শোষনের হার ঘন্টায় ১.৮৪ গ্রাম ), দেহের জলসাম্য বজায় রাখায়, ও দেহের অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রনে অংশ নেয়।
ক্ষুদ্রান্ত্র পাকস্থলী থেকে আগত আম্লিক পাকমন্ডকে গ্রহন করে এবং তাকে আন্ত্রিক রস ,পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রসের ক্ষারীয় উপাদান এর সাহায্যে প্রশমিত করে .
ক্ষুদ্রান্ত্রে পাচিত খাদ্যবস্তু , লবন জল, ভিটামিন ইত্যাদি শোষিত হয়। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের সরল অংশ রক্তজালক দ্বারা ও ফ্যাটের পাচনের ফলে সৃষ্ট সরল অংশ ল্যাকটিয়েল দ্বারা শোষিত হয়। বিশেষ করে আয়রন ডিওডেনামে, ভিটামিন বি১২ এবং পিত্ত লবণ ইলিয়ামে, পানি , লিপিড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট এবং গ্লুকোজ ও অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি শোষিত হয়ে থাকে । এরপর বাকি জীর্ণ-আধাজীর্ণ খাদ্যবস্তু সমুহ এখানকার কাজ শেষে, বৃহদন্ত্রে চলে যায় ।


বৃহদন্ত্র ঃ ( large intestine )
large int
ইলিয়ামের শেষ্ প্রান্ত থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা খাঁজবহুল নলাকার অংশটি হল বৃহদন্ত্র । এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১.৫ মিটার ,ব্যাস-৪-৭ সেমি। বৃহদন্ত্রের ৬ টি অংশ- সিকাম, আরোহী কোলোন , অনুপ্রস্থ কোলোন , অবরোহী কোলোন , সিগময়েড কোলোন ও মলাশয় ।
কাজ ঃ০ বৃহদন্ত্রে অধিকাংশ (৬০-৮০%) জল শোষিত হয়, এছাড়াও গ্লুকোজ , লবন অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কিছু কিছু ওষুধ বৃহদন্ত্রে শোষিত হয় ।
বৃহদন্ত্রে খাদ্যের অপাচিত অংশ পরবর্তীতে মলে পরিণত হয় । প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০ গ্রাম তরল মন্ড বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে এবং তা থেকে গড়ে প্রায় ১৩৫ গ্রাম আর্দ্র মল উৎপাদন করে এবং সে সময় পারদ, আর্সেনিক , বিসমাথ ইত্যাদি ভারী ধাতু বৃহদন্ত্র থেকে রেচিত হয়ে মলের সঙ্গে নির্গত হয় ।
মনে রাখবেন বৃহদন্ত্রে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় বা বসবাস করে এরা ভিটামিন কে ও ফোলিক অ্যাসিড সংশ্লেষ করে । ( Escherichia coli-Escherichia coli )
যা বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি কারী জীবানুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । এরা অপাচ্য খাদ্যের উপর ক্রিয়া করে কার্বহাইড্রেট জাতীয় পদার্থ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড , জৈব অ্যসিড , ফ্যাট থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড , গ্লিসারল এবং প্রোটিন থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড , অ্যামোনিয়া ইত্যাদি সৃষ্টি করে এবং ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে ইনডোল ও স্ক্যাটোল উৎপাদন করে এবং ( মলে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণই – স্ক্যাটোল অ্যামাইনো অ্যাসিড টাইরোসিন ও ফিনাইল অ্যালানিন থেকে ফেনল ও ক্রেসল উৎপন্ন করে ।

মলাশয় ও গুহদার (Rectum & Anal canal)
rect
এটি হল সিগময়েড কোলোনের পর থেকে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ , এই স্থানে মল সাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকে মলাশয়ের পায়ু সনলগ্ন শেষ অংশকে বলা হয় মলনালি । মলাওনালি টি পায়ু ছিদ্র দ্বারা দেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে । মলাশয়ের অন্তর্গাত্রে অর্ধচন্দ্রাকৃতি সম্পন্ন , স্থায়ী ও সাধারনতঃ সংখ্যায় ৩ টি ভাঁজ দেখা যায় । এদের হাউস্টনের কপাটিকা (Houston’s valve) বলে ।

যকৃত ( liver )
liver
এটি উদর গহ্বরে উপরিভাগে ডানদিকে ডায়াফ্রামের ঠিক নিচে ডিওডে নামের উপরদিকে পাকস্থলির পাশে অবস্থিত। যকৃতের নিচ দিকে পিত্তথলির অবস্থান । প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মানুষে এর ওজন ১.৫ কেজি প্রায়। ইহা আবার ছারটি খন্ডে বিভক্ত – এবং অতি ক্ষুদ্র লোবিউল দ্বারা গঠিত । যকৃতের হেপাটিক ধমনী হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে অন্যদিকে অন্ত্র ও প্লীহা থেকে পোর্টাল শিরা পরিপাক নালী থেকে হজম প্রক্রিয়া শেষে রাসায়নিক পদার্থ সমূহ ফিল্টারিং ও ডি-টক্সিফিকেশনের জন্য যকৃতে পৌঁছে দেয় – অর্থাৎ শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য যকৃত যে প্রোটিন, কলেস্টেরল, এবং প্রাণীজ – শ্বেতসার উৎপাদন করে তার জন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যালস এবং প্রোটিন সরবরাহ করে পোর্টাল শিরা এবং যকৃতের নিজের কাজের অংশ হিসাবে, যকৃত পিত্ত থলিতে পিত্ত রস উৎপন্ন করতে সাহায্য করে ।
এই পোর্টাল শিরার মাধ্যমে দেহের আগত রক্তের হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গেই বিলুরুবিন তৈরী হয় এবং লিভারের মাধ্যমে প্রকৃয়াজাত হয়ে পিত্ত রসে রুপান্তরিত হয়ে অন্ত্রে চলে । অন্ত্র থেকে এটি মলের সাহায্যে শরীরের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। কিছুটা আবার অন্ত্র থেকে রক্তে যায় এবং কিডনীর সাহায্যে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়। যে কোন কারন বশত উক্ত বিলিরুবিন লিভারে না এসে রক্তে বেশী ছড়িয়ে যাওয়াকেই জন্ডিস বলে ( যকৃতের যে কোন একটা সমস্যা বলেই মনে করতে পারেন , যাকে আমরা জণ্ডিস বলে থাকি )
যকৃতের কাজ ঃ– ভিটামিন এ, ডি,ই ,কে , বি১২ ও আয়রন সঞ্চয় রাখা এবং – গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন হিসাবে সঞ্চয় করে রাখা – পিত্ত থলিতে বিলিরুবিন তৈরি করা– এলবোমিন, ফিরিনোজেন প্রোথম্বিন তৈরি করা ( ভাইট্রাল প্রোটিন ) — গর্ভ অবস্থায় রেড ব্লাড সেল গঠনে দ্রুত সাহায্য করা- রক্তে গ্লকোজের ভারসাম্যতা রক্ষা করা — ঔষধ ও অন্যান্য ক্যামিকেল পদার্থেরর দ্বারা শরীরে যে রাসায়নিক ও অন্যান্য পদার্থ উৎপাদিত হয় সেগুলো পরিশোধন করা ।
( অনেকেই মনে করেন যকৃতে রক্ত তৈরি হয় , তা একেবারেই ঠিক না – রক্ত তৈরি হয় হাড়ের অস্থি মজ্জার কোষে, তবে যকৃৎ রক্তের পুস্টি জোগান ও প্লাজমা সেল তৈরিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে )


পিত্তথলি ( gallbladder )
gall 1
পিত্তথলির অবস্থান লিভার বা যকৃত-এর ঠিক নিচে আমাদের পেটের উপরের দিকে ডান পাশে। পিত্তথলি ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা একটি থলি, যাতে তরল বাইল এসে জমা হয়। পিত্তথলির কাজ হলো এই যকৃত নিঃসৃত পিত্তরসকে ৫ থেকে ১০ গুণ ঘন করা, মিউকাস নিঃসরণ করে একে পিচ্ছিল বানানো এবং অন্ত্রে পিত্তরসের নিঃসরণের মাত্রা নির্ধারণ করা। আমরা যখন খালি পেটে থাকি তখন এই গলব্লাডারের মুখ বন্ধ থাকে এবং খাবার পরপরই তা থেকে আমাদের ক্ষুদ্রান্তে বাইল বা পিত্তরস বের হয়ে আসে। পিত্ত রসে রয়েছে পানি, রাসায়নিক পদার্থ এবং পিত্ত এসিড ( যকৃতে সঞ্চিত কোলেস্টেরল থেকে তৈরি ) । খাদ্য পাকস্থলীতে প্রবেশের পর ডিওডেনাম থেকে কলিসিস্টেকিনিন হরমোন পিত্ত থলি থেকে পিত্তরস আসার জন্য উদ্দীপ্ত করে । তখন পিত্ত থলি পিত্ত রস নিঃসরণ করে ।
পিত্ত রস বা বাইল এসিডিক আবস্থায় খাদ্যকে ক্ষারীয় করে পরিপাকের উপযোগী করে তোলে। পিত্তলবণ স্নেহ পদার্থের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে পানির সাহায্যে মিশতে সাহায্য করে। পিত্তলবণ পিত্তরসের আন্যতম উপাদান। ফ্যাট জাতীয় এনজাইম লাইপেজের কাজ যথাযথ সম্পাদনের জন্য পিত্তলবণের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ লবণের সংস্পর্শে স্নেহ পদার্থ সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানায় পরিণত হয়। ফ্যাট জাতীয় এনজাইম লাইপেজ এই দানাগুলোকে ভেঙ্গে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।
অর্থাৎ এই পিত্তরস বা বাইলের এর প্রধান কাজ ফ্যাট জাতীয় খাবারকে ভেঙে হজম বা বিপাকে সহায়তা করা।
( গলব্লাডারের মারাত্মক অসুখ দেখা দিলে তা সম্পূর্ণ কেটে ফেলে দিলে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, তাথে তেমন কোন অসুবিধা দেখা দেয়না )

অগ্নাশয় (Pancreas )
penc

এটি পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডানামের অর্ধবৃত্তাকার কুণ্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত। পেটের আম্বিলিক্যাল অঞ্ছল হতে হাইপোকন্ড্রিয়াক অঞ্ছল পর্যন্ত এর আবস্থান এর ছারটি অংশ হেড,নেক,বডি ও টেইল এবং হেড ডিওডেনামের ভিতরে সংযোক্ত যা ১২-১৫ সেঃমিঃ লম্বা ।
অগ্নাশয় প্রকৃত পক্ষে একটি মিশ্র গ্রন্থি। কারণ এতে অনাল ও সনাল ( Duct & Ductless ) উভয় প্রকার গ্রন্থি থাকে।
ডাক্ট বা অনাল গ্রন্থি – ( যাকে অগ্নাশয় রস বলে ) ইহা এনজাইম (Enzyme) নিঃসরন করে হজম বা বিপাকে সাহায্য করা,অগ্ন্যাশয় রসে অ্যামাইলেজ, লাইপেজ ও ট্রিপসিন নামক এনজাইম থাকে।
আন্ত্রিক রসে আন্ত্রিক অ্যামাইলেজ, লাইপেজ, মলটেজ, ল্যাকটেজ ও শুক্রোজ ইত্যাদি এনজাইম সমূহ আংশিক পরিপাককৃত আমিষ ক্ষুদ্রান্ত্রে ট্রিপসিনের সাহায্যে ভেঙ্গে অ্যামাইনো এসিড ও সরল পেপটাইডে পরিণত করে ।
বিশেষ করে আমরা চর্বি জাতীয় যেসব খাবার খাই প্যানক্রিয়াজ এর এনজাইম ব্যতিত তাদের হজম করা কিন্ত একে বারেই দুঃসাধ্য।
ডাক্টলেস গ্রন্থি সমূহ – ইনসুলিন (Insulin), গ্লুকাগন (Glucagon) ও সোমাটোস্টেটিন (Somatostatin)এর মতো অত্যন্ত জরুরী হরমোন তৈরী করা যা রক্ত সংবহন তন্ত্রে গ্লকুজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ।
ধন্যবাদ ———— ২য় পর্বে Heartburn — বা বুক জ্বালা পোড়া কেন করে কীভাবে করে —

No comments:

Post a Comment