shaharpar

Sunday, 15 January 2017

অর্শ বা পাইলস ( Hemorrhoid ) পরিপাকতন্ত্র – পর্ব ৯

অর্শ বা পাইলস ( Hemorrhoid ) পরিপাকতন্ত্র – পর্ব ৯

 

p 000
 
 
 
 
 
 
10 Votes

Ref : NCBI -( National Institutes of Health- UK ), Sir: Richard Cohen – (Cambridge University School of Clinical Medicine ) – Professor . AKM Fazlul Haque ( Colorectal Surgon, Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University ) Cited & – ‎Related articles Dr. Helal Kamaly ( Hon PhD Std Public health & Medical Science )

তীব্র বেদনা দায়ক এবং জটিল রোগগুলোর মধ্যে অর্শ বা পাইলস হলো একটি কিন্তু মলদ্বারে বা পায়ুপথ দিয়ে রক্ত আসলে বা ব্যথা করলেই যে অর্শ বা পাইলস হয়েছে তা মনে করা ঠিক নয় – যেসব রোগের কারনে টয়লেটে রক্ত যায় তার মধ্যে রয়েছে পাইলস, এনালফিশার, পলিপ, ক্যান্সার, ফিস্টুলা, আলসারেটিভ কোলাইটিস, রেকটাল প্রোলোপস ইত্যাদি এবং তার মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ পাইলস, ২ শতাংশ থ্রমবোসড পাইলস, ৩৫ শতাংশ এনাল ফিশার, ২.২ শতাংশ পাইলস, ফিস্টুলা, এনাল ফিশার একত্রে, ১৫ শতাংশ ফিস্টুলা, ২.৫৫ শতাংশ পায়ুপথ ক্যান্সার, ৩.৫ শতাংশ রেকটাল পলিপ, ২ শতাংশ মলদ্বারে ফোঁড়া, ১.৮৪ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে ব্যথা, ৬ শতাংশ ক্রণিক আমাশয় (আইবিএস), ০.৫ শতাংশ অজানা কারণে রক্ত যাওয়া, ০.২৫ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে চুলকানি রোগে ভুগে থাকেন । ( রিসার্চ তথ্য – অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক )
সে জন্য অর্শ বা পাইলস নিয়ে জানার আগে পায়খানার সাথে অন্যান্য প্রধান যে সকল অসুখের কারনে পায়খানার রাস্থায় জ্বালা পূড়া, ব্যথা ও রক্ত যেতে পারে সেই সকল অসুখ নিয়ে অল্প কিছুটা জানার দরকার –নতুবা পাইলস হলে মনে করবেন ফেস্টুলা আর ফেস্টুলা হলে মনে করবেন পাইলস রোগে ভুগিতেছেন ইত্যাদি

অর্শ বা পাইলস ( Hemorrhoids )
p 4
প্রতিটি সুস্থ্য মানুষের মলদ্বারের অভ্যন্তরে এর আবরণী (মিউকাস মেমব্রেন অথবা চামড়া) -র নীচে বিভিন্ন ধরণের রক্তনালী ও যোজক কলার (কানেকটিভ টিস্যু) সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি কুশন থাকে যেগুলি পরস্পরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সংলগ্ন থেকে মলদ্বারের মধ্য দিয়ে মল ও বায়ুর নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে। নানাবিধ কারণে এই কুশনসমূহ স্ফীত হতে পারে বা ফুলে ঊঠতে পারে এবং এদের ন্থানচ্যুতি হতে পারে। এই স্ফীত ও স্থানচ্যুত রক্তনালীর কুশনগুলিই পাইলস বা অর্শ। ( বিস্তারিত নিম্নে দেওয়া আছে )

অ্যানাল ফিসার — Anal Fissures
anal pis
অ্যানাল অর্থ মল দ্বার আর ফিশার মানে ঘা বা ফেটে যাওয়া – অর্থাৎ মলদ্বারের রাস্থা ফেটে যাওয়া । ( বিস্তারিত পরবর্তী অধ্যায়ে জেনে নিবেন )

অ্যানাল ফিস্টুলা বা ভগন্দর ( A- fistula )
fistula
অ্যানাল অর্থ মল দ্বার আর ফ্যাস্টুলা মানে সঙ্কীর্ণ পথ অথবা সরু নালী = অ্যানাল ফিস্টুলা বা ভগন্দর ।দেখতে মলদ্বারের পাশে ফোঁড়ার মত হয়, ফুলে উঠে, পুজ জমে ফেটে যায় এবং এটা বার বার হয়। এতে মলদ্বারের সাথে মলদ্বারের আশেপাশের ত্বকের মধ্যে নালির মত সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে এই নালি বন্ধ হয়ে পুঁজ হয় এবং তা ফেটে বের হয়ে যায়। একেই অ্যানাল ফিস্টুলা বা ভগন্দর বলা হয় ( বিস্তারিত পরবর্তী অধ্যায়ে জেনে নিবেন )

পেরি এনাল এবসেস বা ফোড়া ( P-A Abcess )
anal ab
মলদ্বারের আশপাশে এই ফোড়া হয়ে থাকে। ফোড়ার স্থানটি ফুলে যায়, প্রচণ্ড টনটনে ব্যথা ও জ্বালা থাকে বা পুজ রক্ত আসতে দেখা যায় এবং একেই পেরি এনাল এবসেস বা ফোড়া বলা হয় । চিকিৎসা করাতে দেরী করলে ফোঁড়া নিজে নিজে ফেটে যেতে পারে যা পরবর্তীতে ফিস্টুলা বা ভগন্দর এ রূপ নিতে পারে

পেরি এনাল হিমাটোমা ( perianal hematoma ) 
peri anal hematoma
এই রোগে মলদ্বারের পাশে স্কিনের নিচে রক্তনালী ছিঁড়ে রক্ত জমা হয়। মোটা বড় আকারের শক্ত পায়খানা করার সময় মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ দেয়ার ফলে রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে এই রোগের উৎপত্তি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের সময় এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। এই রোগে মলদ্বারের পাশে ব্যথা ও ফোলা থাকে এবং দেখতে লালচে বেগুনি রঙের মতো হয়। যাকে পেরি এনাল হিমাটোমা বলা হয় ।

আলসারেটিভ কোলাইটিস ঃ-  ( U Colitis )
মলদ্বার এবং মলাশয়ের যে কোন ধরণের প্রদাহ অথবা ক্ষত হলে পায়খানার রাস্থা দিয়ে রক্ত আসতে পারে ( বিস্থারিত পরবর্তী পর্বে )
ক্রনস্‌ ডিজিজঃ– ( Crohn’s disease )
এই জাতীয় রোগকে অনেকে পুরাতন আমাশয় ও বলে থাকেন। পেটে ব্যথা হওয়া, ঘনঘন মলত্যাগ, জ্বালা, যন্ত্রনা, মলের সাথে রক্ত যাওয়া, পুঁজ যাওয়া, মিউকাস বা আম যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ সহ অন্ত্রে কামড়ানো মোচড়ানোর নানা ধরণের লক্ষণ থাকে ।
ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রম (আই.বি.এস)— ( অনিয়ন্ত্রিত পায়খা পর্বে দেখুন )

কোলন- পলিপ ঃ ( Colon Polyps )
polip 0
এক ধরনের টিউমার। মাঝে মাঝে রক্তপাত হয় এবং অনেক সময় মলদ্বার দিয়ে মাংসের মত বেরিয়ে আসে। পায়খানার রাস্তায় আঙ্গুলদিয়ে পরীক্ষা করলে অনেক সময় তা হাতে অনুভব করা যায়। উপরের দিকে থাকলে কোলনস্কপির মাধ্যমে দেখা যায়। ইহা এক বা একাধিক হতে পারে। বাচ্চাদের এই রোগ বেশী হয় তবে যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। এই পলিপ থেকে এই পলিপ থেকে অনেক সময় ক্যন্সার হয়। তাই যতদ্রুত সম্ভব কেটে ফেলাই ভাল।

কলোরেকটাল ক্যান্সার ঃ ( Bowel cancer  or colorectal cancer)
colectoral cancer
মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া (সাধারনত মলের সাথে মিশানো ), মল ক্লিয়ার না হওয়া, বার বার মলত্যাগের চেষ্টা করা এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তি না আসা,মিউকাস ও রক্ত একসাথে যাওয়া, পেটে ব্যথা, কোমর ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া এবং সেই সাথে পেটে চাকা অনুভব করা মনে করলে কলোরেকটাল ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে- সে জন্য । উপসর্গ অভিজ্ঞ কলোরেকটাল বিশেষজ্ঞের পরামর্ষ ও চিতসা নিলে খুব দ্রুত তার উপযুক্ত ব্যবাস্থা গ্রহন করা সম্বভ ( বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন )
পেরি এনাল ওয়ার্ট (আঁচিল) or Anal Warts
peri anal wat
এই রোগে ছোট ছোট অসংখ্য ওয়ার্ড বা আঁচিল মলদ্বারের চার পাশে দেখা যায়। এই রোগ ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে এবং যৌন সংসর্গের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এই রোগী ব্যথায় অস্বস্তি, ঘা এবং মলদ্বারে জ্বালাপোড়ার কথা বলে থাকে। ইত্যাদি !!!!!!!

পাইলস বা Hemorrhoids ( বিস্তারিত )

মেডিক্যাল হিস্ট্রি ( মেডি-উইকিপিডিয়া ) :
medical histery
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে হিপোক্রেটিস এই প্রযুক্তির ধারণার জন্মদাতা। ১১ শতকে ইংল্যান্ডে শল্যচিকিৎসার ক্ষুদ্রচিত্র৷ ডানদিকে প্রথম অপারেশন করা হয় -তথ্যনুসারে অসুখটি খৃষ্টপূর্ব ১৭০০ সালে মিশরের একটি প্যাপিরাস কাগজে এই অসুখের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, সেখানে যে পরামর্শ দেওয়া হয় তা হল: “…একটি ঔষধই প্রয়োগ করবেন, যা বিশেষ সুরক্ষাদায়ক মলম; বাবলা গাছের পাতা, মাটি, মিহি গুঁড়া করে একত্রে জাল দিতে হয়৷ এক ফালি অতি সূক্ষ্ম লিলেন কাপড়ে এটি মেখে মলদ্বারে রাখতে হবে, এতে অবিলম্বে রোগ নিরাময় হবে৷ – খৃষ্টপূর্ব ৪৬০ সালে হিপোক্রেটিক কর্পাস-এ আধুনিক কালের রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের অনুরূপ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে: “এবং একই ভাবে হেমোরয়েডের চিকিৎসায় তা সুচ দ্বারা ছিদ্র করে খুব পুরু উলের সূতা দিয়ে বেঁধে রাখুন, যতক্ষণ ঝড়ে না পড়ে ততক্ষণ এটি নাড়াচাড়া না করে রেখে দিন৷ রোগী সুস্থবোধ করলে তাকে এক হেলিবোর ভেষজ ওষুধের একটি কোর্স দিন৷ – বাইবেল-এ হেমোরয়েডের উল্লেখ আছে । কিন্তু এর মূল কারণ এখন ও পাওয়া যায়নি ।

পাইলস কি ঃ
p 2
প্রতিটি সুস্থ্য মানুষের মলদ্বারের অভ্যন্তরে এর আবরণী (মিউকাস মেমব্রেন অথবা চামড়া) -র নীচে বিভিন্ন ধরণের রক্তনালী ও যোজক কলার (কানেকটিভ টিস্যু) সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি কুশন বা নরম মাংস পিণ্ড থাকে যেগুলি পরস্পরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সংলগ্ন থেকে মলদ্বারের মধ্য দিয়ে মল ও বায়ুর নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে। নানাবিধ কারণে এই কুশনসমূহ স্ফীত হতে পারে বা ফুলে ঊঠতে পারে এবং এদের ন্থানচ্যুতি হতে পারে। এই স্ফীত ও স্থানচ্যুত রক্তনালীর কুশনগুলিই পাইলস বা অর্শ। যে সকল কারণে মলদ্বারের নিকটবর্তী শিরা সমূহে রক্ত চলা-চলের গতিরোধ হয়ে রক্ত সঞ্চিতির ফলে স্ফীতি এবং বড় হয় এবং ভেতরে ফুলে ওঠা রক্তের শিরার একটি মাংসপিণ্ড বিশেষ ।

পাইলস সাধারনত দুই রকমের হয়ে থাকে
pathophisiology
যেমন ১- Internal haemorrhoids বা অভ্যন্তরীণ পাইলস ২- External haemorrhoids বা বাহ্যিক পাইলস । তবে কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে উভয় ধরনের পাইলসই একসাথে পাওয়া যেতে পারে।

শিরা স্ফীতির ওপর অভ্যন্তরীণ পাইলসের প্রকারভেদ যথা :- ( ১-২ ইঞ্চি ভেতরের দিকে শিরার স্ফীতি হয়ে বলির সৃষ্টি হয় তাও আবার ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। )
p 5
প্রথমতঃ মলদ্বারের ভেতর থেকে ব্যথাহীন রক্তপাত হয়। কিন্তু পাইলসের মাংসপিণ্ড মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসে না।
দ্বিতীয়তঃ মাংসপিণ্ড মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসে, তবে মলত্যাগের পর নিজে নিজেই ভেতরের দিকে চলে যায়।
তৃতীয়তঃ মাংসপিণ্ড গুলো বাইরে বের হয়ে আসে এবং হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে না দিলে বাইরেই থেকে যায়।
চতুর্থ ঃ মাংসপিণ্ড গুলো সবসময় বাইরে বের হয়ে থাকে। ভেতরে ঢোকানো যায় না। তখন রক্তজমাট বাঁধা , সংক্রমণ, ক্ষত কিংবা রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় বা পচন ধরতে পারে ।

২. এক্সটারনাল বা বাহ্যিক :
মলদ্বারের বাইরে মাংসপিণ্ড সৃষ্টি হয় এবং হাত দিয়ে তা অনুভব করা যায় বা দেখা ও যায় এবং এতে মলদ্বারের পার্শ্বে সামান্য স্ফীতি বা ফোলা দেখা যায়, সাধারনত ব্যথাহীন তবে ভিতরে রক্ত জমাট বেধে গেলে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। আশপাশের চামড়ায় এবং মলদ্বারে চুলকানী হয়।

৩. মিশ্র অর্শ :
mix hemoroids
এক্ষেত্রে মলদ্বারের ভেতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই অর্শের বলি পাওয়া যায়।
তা ছাড়া আকৃতি অনুযায়ী দেখতে ভিন্ন রকম হতে পারে ঃ- – যেমন :-ছোলার মতো,আঙুরের মতো, খেজুর গাছের শিকড়ের মতো, রেশন গাছের গোটার মতো,খেজুরের মতো, ডুমুরের মতো ইত্যাদি ।

পাইলসের কারণ সমুহ
couse
অর্শে রোগের সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেঃ
১- ৬০% রোগীদের পাইলস হয়ে থাকে যে দুটি কারনে, তা হলো – কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও আই.বি.এস জাতীয় অসুখে । এ জন্য বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দায়ী করা হয় খাদ্য অভ্যাস কে । যেমন, কম পানি, কম শাকসবজি, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার অথবা বেশী প্রাণীজ প্রোটেন জাতীয় খাবার । সেই সাথে জীবনযাপন ও নিয়মিত কিছু অভ্যাস পরিবর্তন ইত্যাদি ।
এ ছাড়া, সময়মতো মলত্যাগ না করা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যতার জন্য পায়খানায় বেশী সময় বসে থাকা ( মনে রাখবেন সময় মত মল ত্যাগ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত প্রেসার দিতে হয়। ফলে মলদ্বারের চারদিকে রক্তনালী ও মাংসপি- ফুলে গিয়ে পাইলস সৃষ্টি করে। )
২- অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ)ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা ।
৩- সর্বদা বসে কাজ করা, অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া, দীর্ঘদিন রাত জোগে কাজ করা,- মেদ ভুড়ি বেশী হলে , বংশগত কারনে সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে।
৪ লিভার সিরোসিস (such as cirrhosis — end stage liver disease),
৫- বয়স্কদের বেলা ৭৫% এমনিতেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের গঠনকে ধরে রাখার কলার ক্ষয় হতে থাকে যার কারণে মলদ্বারের ভেতরের কুশনটি ঢিলা হয়ে ঝুলে পড়তে থাকে। এমতাবস্থায় শিরাগুলোর স্পিতি হয়ে পাইলস হয়ে থাকে ।
৬- গর্ভবতী অবস্থায় অথবা পেলভিকের আভ্যন্তরীণ মাংসপেশির ত্রুটিগত কারনে হতে পারে ।

.অভ্যন্তরীণ পাইলসের লক্ষণ ঃ
sympt 2
এ ক্ষেত্রে টয়লেটে টাটকা লাল রক্ত দেখা যায় এবং এতে কোনোরূপ ব্যথা থাকে না যা মলত্যাগের শেষে রক্ত যায়। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় যায় আবার কখনো তীরের বেগে যায়। ( তবে অনেক সময় রক্ত যাওয়ার পর যদি বেশি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয় তাহলে এনাল ফিশার বা ক্যান্সারের মত মারাত্মক অসুখের সন্দেহ করা হয় ) রক্ত যেতে যেতে রোগী গভীর রক্তশূন্যতায় ভুগতে পারেন।
মলদ্বারের বাইরে পাইলসটি ঝুলে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে মলত্যাগের শেষে পাইলসটি আপনাআপনি ভেতরে ঢুকে যেতে পারে অথবা রোগী হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয় ।
যখন দেখবেন এটিকে চাপ দিয়ে ঢুকানো যায় না তখন একে চতুর্থ ডিগ্রি পাইলস বলে ধরে নিতে হবে ( তখন অপারেশন জাতীয় কিছু ছাড়া বিকল্প অন্য কোন পন্থা নেই ) ।
পাইলসের রক্ত যাওয়া কখনো একটানা চলে না। প্রথমত বছরে একবার বা দু’বার যেতে দেখা যায় , এরপর দু’ তিন মাস পরপর যায়। পরে প্রতি মাসে যায় এবং অবশেষে ঘন ঘন রক্ত যায় বা সে সময় রক্ত যাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়।


পাইলসে ব্যথা কখন হতে পারে –
মলদ্বার পিচ্ছিল ও ভিজে থাকা, চুলকানী, স্থানচ্যুত পাইল্সসমূহ মলদ্বারের বাহিরে চলে আসে যা পর্যায়ভেদে আপনাতেই ভিতরে চলে যায় বা আঙ্গুল দিয়ে ভিতরে ঠেলে দিতে হয় তখন পাইলসসমূহের ভিতরে রক্ত জমাট বেধে গেলে বা ইনফেকশন হলে বা পচন ধরে গেলেই ব্যথার সৃষ্টি হয় ।

পাইলস মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ
external
মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায় ও সেই সাথে পায়খানা করার সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্ত যাওয়া সহ মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
– মাঝে মাঝে মাংশ পিণ্ডতে চুলকায়, দপদপ করে, টাটানী বা কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি এবং জ্বালাকর বেদনা। মলদ্বারে বা পায়খানার রাস্তায় কাটা বা কাটি থাকার অনুভুতি সহ পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করার কথা বলে থাকেন । পাইলসের বেদনা ও জ্বালা মলত্যাগের কোথ দেয়ার সময় একটু বেশী বাড়ে । এ ছাড়া কারও কারও বেলায় উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ সহ কোমরে ব্যথা দেখা দিতে পারে ।

প্যাথফিজিওলজি (  Pathophysiology ) 
patho 2
হেমোরয়েড কুশন বা পাইলসের নরম পিণ্ড মুলত স্বাভাবিক মানব শরীরের অংশ ও তাতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলেই কেবল তার পরিবর্তিত বিকৃতি ঘটেই অসুখ টি দেখা দেয় । স্বাভাবিক ভাবে পায়ু পথে প্রধান তিনটি কুশন বা নরম পিণ্ড থাকে থাকে। এগুলি বাম পার্শ্বে, ডানদিকে সম্মুখভাগে ও ডানদিকে পিছনে অবস্থিতএবং ইহা ধমনী বা শিরা দ্বারা গঠিত নয়, তবে সাইনোসয়েডস নামক রক্তনালী, যোজক কলা ও মসৃণ কলা দ্বারা গঠিত যা সাইনোসয়েডের প্রাচীরে শিরা-প্রাচীরের ন্যায় কোনো পেশী কলা নাই । এই রক্ত নালীগুলো হেমোরয়ডাল প্লেক্সাস (হেমোরয়েডের জাল) হিসাবে পরিচিত। ( মোঠা মুঠি ভাবে মনে করতে পারেন নাকের পলিপের মতই )
এই হেমোরয়েড কুশন বা নরম পিণ্ড সমুহ পায়ুপথে গ্যাস বা মল নির্গমনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণহীনতা স্বাভাবিক রাখতে খুবী গুরুত্বপূর্ণ । সেই সাথে পায়ু বেষ্টনকারী রিং আকারের মসৃণ পেশী, স্বাভাবিক অবস্থায় যা পায়ু পথকে সংকুচিত রাখে এবং সুরক্ষা করে ।
ধারণা করা হয় যে, এসব রক্তনালী নিচের দিকে নেমে গেলে বা শিরার চাপ খুব বেড়ে গেলে হেমোরয়েডের উপসর্গ দেখা দেয় অথবা অ্যানাল স্ফিঙ্কটার এর বর্ধিত চাপও হেমোরয়েডের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। live video bellow the link ( https://www.youtube.com/watch?v=VqrMlfIQW7w&ebc=ANyPxKpa65ojzi-gVJ0u8GfRU1jmk_gLBvjqh1H-)  or  i3w1pKl1GQ6SD7COcYJL7lvRwXbjg6rnfsBiLx9NdlJEL0ZxV3yTC_AExA

ডায়াগনোসিস ঃ-
diagnosis
পাইলস অসুখ না মলাশয়ের অন্য অসুখ তা সঠিক ভাবে বুজার জন্য অবশ্যই সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন – ( কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অসুখটি পাইলস না হয়ে এনালফিশার, পলিপ অথবা ফিস্টুলা অথবা ক্যানসার জাতীয় অসুখ হয়ে যেতে পারে ! )
সে জন্য চিকিৎসকরা প্রথমেই ডিজিট্যাল রেক্টাম পরীক্ষা করে থাকেন ( আঙ্গুল দিয়ে পায়ুপতের পরীক্ষা )
একি সাথে প্রয়োজন বোধে কলনোস্কোপী (Colonoscopy) অথবা সিগময়ডস্কপি করার কথা বলতে পারেন । যদি পারিবারিক ভাবে কারও বৃহদান্ত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে তা হলে অবশ্যই সিগময়ডস্কপি অথবা প্রকটস্কপি করা উচিৎ ( মলদ্বার, পায়ুপথ ও বৃহদান্ত্রের ভেতরে এ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। প্রকটস্কপি এ যন্ত্র দিয়ে মলদ্বার ও পায়ুপথের নিচের দিক পরীক্ষা করা হয় )

চিকিৎসা ঃ

f 2
পাইলস চিকিৎসার জন্য বহু ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ১ অথবা ২ ডিগ্রি পাইলসে খাদ্য অভ্যাস বদলিয়ে মল নরম করার ঔষধ সমুহ সেবন করলে কিছু দিন পর আপনা আপনি কমে যায় ৮০% বেলায় তা পুনরায় আর দেখা দেয়না
– ২ ডিগ্রি ও তিন ডিগ্রির বেলায় ইনজেকশন, রিংলাইগেশন, ইলেকট্রোকোয়াগুলেশন, আল্ট্রয়েড, ক্রায়োথেরাপি , ইনক্রারেড ফটোকোয়াগুলেশন ইত্যাদি মাধ্যম খুবী কার্যকরী – তবে ক্ষেত্র বিশেষ ৩ ডিগ্রি অথবা ৪ ডিগ্রির বেলায় পাইলস সমুহ কে কেটে ফেলাই সবচেয়ে উত্তম এবং সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে Longo বা Stapled Haemorrhoidectomy পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতিতে ৯৭% সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্বভ । । বিস্তারিত নিম্নে তুলে ধরলাম —- ।
শল্য চিকিৎসা ছাড়া পাইলসের যেসব চিকিৎসা আছে সেগুলো হলো: (Non-surgical approaches ) ঃ-
প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে বা ওষুধের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার চেস্টা করুন ( বিস্তারিত কোষ্ঠকাঠিন্যতা পর্ব -গ তে দেখুন ) + সেই সাথে মলদ্বারের সামান্য ভেতরে ইরিয়ান, এনুস্ট্যাট, নুপারকেইনাল , হেডেনসা , রিলিচ রেকটাল ইত্যাদি যে কোন একটি মলম দিনে ২-৩ বার লাগাবেন , ৭-১৪ দিন।
+ ঃ সিজ বাথ, হিপ বাথ বা গরম পানির সেঁক দিনে ২/৩ বার দেওয়ার চেস্টা করুন যদি পাইলস টি প্রথম ও ২য় স্থরের হয়ে থাকে তা হলে ৭০% সম্বাভনা সম্পুন ভাল হওয়ার । কারও কারও বেলায় ২/৩ বছর পর অসুখটি পুনরায় ফিরে আসতে পারে যদি খাওয়া দাওয়া ও জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন করেন ।
( সিজ বাথ, হিপ বাথ বা গরম পানির সেঁক দেয়ার নিয়ম হচ্ছে একটি গামলায় গরম পানি (৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) দিয়ে তার ভেতর চা চামচের ২ চামচ লবণ দিয়ে নিতম্ব ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে ১০ মিনিট, দিনে ২-৩ বার। এতে মলদ্বারের ব্যথা কমবে )
+ ঃ যদি ব্যথা বেশী হয় তা হলে যে কোন ধরণের ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করতে পারেন প্যারাসিটামল ১টি করে দিনে ২/৩ বার অথবা বরফের টুকরা গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ফোলা জায়গায় লাগালেও ব্যথা সাময়িক কিছুটা উপশম হবে ।
+ ঃ যদি রক্ত যায় অথবা মনে করেন অসুখটির গ্রেড ২ অথবা ৩ এর দিকে চলে যাচ্ছে , তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্ষে নিচের ঔষধ সমুহ ১৪ দিন সেবন করলে ৮৩% সম্বাভনা আছে ভাল হয়ে যাওয়ার । –( এফ ডি এ এবং ফামাকলিজির সর্বশেষ তথ্য অনুসারে )
গ্রেড ৩ এবং ৪ এর বেলায় ঃ- ট্যাবলেট সিটকম ১০০মিগ্রাঃ দিনে দুইবার ১৪ দিন এবং যদি পাইলস বাহিরের দিকে থাকে তা হলে সিটকম ক্রিম ও ব্যবহার করতে পারেন । ( মিমস জার্নাল, ইন্ডিয়া )
( SITCOM cream- 10 mg x 1 g x 30g (149 INR), SITCOM film-coated tab 100 mg x 7’s (218.35 INR) Manufacturer:Panacea ) বাজারজাত কৃত সিটকম কম্পাউন্ডে phenolic compounds,falvonoids and tannins মিশ্রিত বিধায় মলাশয় ও এর আশে পাশের পাইলসের রক্ত বন্ধ সহ , জ্বালা যন্ত্রণা, প্রদাহ , চুলকানি ইত্যাদি খুব দ্রুত উপশম করতে ভাল একটি কম্বাইন্ড ঔষধ । তবে শিশু এবং গর্ভবতী দের বেলায় ইহা সেবন করা উচিৎ নয় । )
একি সাথে ডোপালেক জাতীয় বা ল্যাক্টোস মিশ্রিত সিরাপ রাতে ঘুমানোর আগে সেবন করুন – এতে করে সকালের পায়খানা খুবী সহজতর হবে ।
যদি খুব বেশী কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্ষে সাপজেটরি এনেমা ও ব্যবহার করতে পারেন । বাজারে Cinoplus বা Erian ইত্যাদি নামে ঔষধ সমুহ পাওয়া যায় ।
অথবা
treatment
বর্তমানে কম্বাইন্ড বায়ো-সিন্থেটিক ভেষজ হিসাবে বেশ ভাল উপকারী যা সিটকম ট্যাবলেটের পরিবর্তে সেবন করতে পারেন ঃ-
ট্যাবলেট ইউপরবিয়া ১০০ মিগ্রাঃ ১ টা করে ১৪ দিন অথবা যদি রক্তপাত বেশী হয় ( গ্রেড ৩ অথবা ৪ ) তাহলে দিনে দুইবার সেবন করতে পারেন
( Euphorbia ঃ containing 3.15 – 8.25 mg total flavonoid calculated as apigenin-7-glucoside and 12.6-44.0 mg total phenolics calculated as gallic acid)
সাবধানতা ! ঃ এ সময় অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে নতুবা এইসব ঔষধ সেবনে সঠিক ফল না ও পেতে পারেন ।

ইনজেকশন থ্যারাপি ঃ ঃ ( গ্রড ২ এবং ৩ এর বেলায় প্রযোজ্য )
injection
Oily phenol গ্রোফের ইনজেকশন যাকে এন্টি-হেমোরয়েডেলস ঔষধ হিসাবে বিবেচনা করা হয় । এ ধরণের ইঞ্জেকশনে দেওয়ার ফলে শিরার দেওয়ালে ভাঙ্গন ধরে ও পাইলস কুঁচকে ও সংকোচিত হয়ে যায় বিধায় ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া যায় ৷ফল অনুসারে ৭৭% বেলায় ১০০% ভাল হওয়ার আশা করা যায় যা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সন্তোষজনক ।
ইনজেকশন সমুহ ভিতরের পাইলসের চতুর্দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় – এবং ইনজেকশন দেওয়ার ৪/৬ সপ্তাহের ভিতরেই পাইলস ছোট হয়ে আসে বা পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যায় । ইহা আলমন তৈল থেকে তৈরি বিধায় এলারজি , শিশু এবং গর্ভবতীদের বেলায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ – সাধারণত ২ এম এল করেই পাইলসের গোঁড়ার চতুর্দিকে চিকিৎসকরা প্রয়োগ করে থাকেন এবং সে সময় ইনজেকশনের কারনে ব্যথা বা ইনফেকশন হলে সেই অনুপাতে চিকিৎসকরা অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন ( বিস্তারিত ঔষধের লিফলেট অথবা আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিবেন )

রাবার ব্যান্ড রিং- লাইগেশন থ্যারাপি (Rubber band ligation) রক্তপাত ও ব্যাথা ছাড়াই পাইলসের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ( গ্রেড ২,৩ এবং ক্ষেত্র বিশেষ ৪ এ প্রয়োগ করা যায় )
banding
সময়ের বিবর্তনে এখন অনেক ধরনের ব্যান্ড লাগানোর যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে Suction banding এখন ও অন্যতম । নতুন পদ্ধতি অনুসারে মেশিন টিতে আগে থেকেই ব্যান্ড বা রিং পরানো থাকে। যন্ত্রটি Suction মেশিনের সাথে যুক্ত করে শুধু ট্রিগার টিপলেই ব্যান্ডটি নির্দিষ্ট স্থানে লেগে যায়। ( চিমটার সাহায্যে পাইলসকে টেনে ধরে রাবার ব্যান্ড পিলসে পরাতে হয়না ) । এরফলে পাইলসের মাংসপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পাইলসের ফুলা মাংসপিণ্ডটি কুচকে গিয়ে সপ্তাহ খানেকের ভেতর পাইলসের মাংসপিন্ডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে পড়ে যায়। চিকিৎসার সময় বা পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনোরূপ ব্যথা হয় না। কোনো অজ্ঞান বা অবশ করার প্রয়োজন নেই। এই পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে সফলতা প্রায় ৯৭ ভাগ । যেহেতু আমাদের শরীরে প্রধান তিনটি পাইলস আছে অতএব সর্বোচ্চ তিনবার এরূপ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে এবং দু’বার চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহ ব্যবধান থাকতে হয়।
লিভ ইউ টিউভে দেখে নিন ( https://www.youtube.com/watch?v=KJ-yis7MaqU )

Longo বা Stapled Haemorrhoidectomy লঙ্গো থ্যারাপি ঃ
longo
অধ্যাপক ড,এন্টিও লঙ্গো , ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমো, ইতালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যার কারনে এর অন্য নাম এন্টিও লঙ্গো । ইহা অটো-স্টেপ্লারের মত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটা-ছেঁড়া করা হয় – পায়ুপথের ৩/৫ মিমিঃ গভিরে ঢুকিয়ে রেকটামের ভেতরের চক্রাকার মাংসপিণ্ড ( পাইলস ) কেটে নিয়ে আসে এবং সে সময় উক্ত যন্ত্রে ঢোকানো সেলাইয়ের সুতার দ্বারা কাটা স্থানের গোড়াতে সেলাই করার মত শক্ত বাঁধন দিয়ে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় । যার ফলে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। আর ক্ষতস্থান থাকে না বলে শুকানোর ও দরকার হয়না । এ ছাড়া রেক্টামে ব্যাথার অনুভুতি না থাকায় সেখানে ব্যাথা হওয়ার কথা ও নয় যার কারনে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে । তবে সামান্য ব্যাথা দেখা দিতে পারে অপারেশনের সময় মলদ্বার দিয়ে প্লাস্টিক এন্যাল ক্যাথিটার ও অন্যান্য যন্ত্র পাতি ব্যবহারের ফলে । তা চাড়া ১২ – ১৪ ঘটা পর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে ও অসুবিধা হয়না । এ পদ্ধতিতে খরচ একটু বেশী হলে ও সবচেয়ে সেইফ ম্যাথড হিসাবে বিবেচিত ( https://www.youtube.com/watch?v=5Mp5CKSFYHs )

সরাসরি অপারেশন পদ্ধতি ( Haemorrhoidectomy ) ঃ-
দজোীোূগদল
আভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য আজকাল আর অপারেশন করতে হয়না যদি গ্রেড-৩ অথবা ৪ এ পছন জাতীয় কোন পদার্থ প্রয়োগ করা হয় অথবা অন্য কোন সমস্যা থাকে – তাহলেই বিশেষজ্ঞ সার্জনরা তা সরাসরি অপারেশনের পরামর্ষ দিয়ে থাকেন । সে জন্য ভাল হতে ও ঘা শুকাতে সময় লাগে ৩ মাস । এখানে আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভাল – লেজার অপারেশন ও ব্ল্যাড দিয়ে অপারেশন প্রায় সমান তফাৎ শুধু লেজারের বেলায় লেজার রস্নি বা infrared light দিয়ে তা কাঠা হয় , তবে লেজার দিয়ে অপারেশন করলে ব্যথা ও ইনফেকশন হওয়ার সম্বাভনা একটু কম থাকে ।

পাইলস নিয়ে চিকিৎসা বিষয়ক কিছু কুসংস্কার ঃ
ser
মনে রাখবেন পাইলসের ৩ টি কুশন বা নরম পিণ্ড প্রত্যেকের ই আছে এবং দেখতে তা পাতলা আবরণীর জালের মত ( হেমোরয়ডাল প্লেক্সাস ) । যে কোন কারনে যদি তা বড় হতে থাকে তখন সার্জারির সুত্র অনুসারে তার সাথে রক্ত চলাচলের পথ সংকোচিত বা বন্ধ করে দিতে পারলেই তা ভাল হয়ে যায় ।
গ্রেড -১ এবং ২ এর বেলায় সহজ লভ্য খাবার দাবার বা ঔষধি পথ্য সেবন করলে কিছুদিনের ভিতর তা আবার মিলিয়ে যায় বা ৭১% বেলায় ভাল হয়ে যায় । সে জন্য
ঢাক ধোল বাজীয়ে ক্ষতিকারক ভেষজ বা ক্যামিকেল ঔষধি সেবন করলে ভাল হয়ে যায় এ ধরণের ধারনা সম্পূর্ণ ভুল । অন্যদিকে গ্রেড -৩ বা ৪ এর বেলায় অনেক গ্রামীণ চিকিৎসক ও কবিরাজরা এসিড জাতীয় ভেষজ বা ক্যামিকেল পদার্থ (এসিড নাইট্রিক,তমন কার্ব, এসিড সালফার ইত্যাদি ) দিয়ে তা জ্বালিয়ে বা পচিয়ে ভাল করার চেস্টা করেন এবং রেজাল্ড অনুসারে দেখা যায় ৪৭% ভাল হয়ে থাকেন খুব ব্যদনা দায়ক মারাত্মক কস্ট যন্ত্রণা সহ্য করে , তাও এর বিপরীতে অনেক ধরণের মারাত্মক সমস্যা সারাজীবন লেগেই থাকে । ২১% বেলায় তা ভাল না হয়ে, পছন জনিত ইনফেকশন বা তার সাথে সংযোক্ত পায়ু পথের অন্যান্য অংশ ও পচে যেতে দেখা যায়, ইত্যাদি এবং শেষপর্যন্ত বিশেষজ্ঞ সার্জনদের সরাসরি অপারেশন করা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকেনা বা অনেক সময় আর কোন দিন ভাল নাও হতে পারে । তাই এসব প্রথম যুগের চিকিৎসা থেকে বিরত থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি ।
অন্য দিকে ১১% বেলায় দেখা যায় অসুখটি পাইলস নয় বরং অন্য কোন অসুখ, তখন আমার মতে উক্ত রুগীকে পাইলসের চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর দিকে টেলে দেওয়া ছাড়া আর অন্য কিছু নয় – যা মোঠেই কাম্য নয় । – ( এশিয়ান মেডিক্যাল জার্নাল রেফারেন্স – ডাঃ হেলাল কামালি )


অপারেশন করার পর ও কি পাইলস দেখা দেয় ? ( – ২% )
অনেকের সঠিক অপারেশন করার পর আবার পাইলস দেখা দেয় তা আংশিক সত্য , তবে তা মাত্র ২% বেলায় দেখা দেয় অথবা ভুল বুঝার কারনে পাইলস সন্দেহ জেগে থাকে যেমন, মলদ্বারে বাড়তি ত্বক বা মাংসপিণ্ড অথবা চুলকানি হলেই তা মনে করা – অথবা বিশেষজ্ঞ সার্জনের অপারেশনের কৌশলগত কারণের ভুলে ও হতে পারে যেমন, অপারেশনের সময় যে শিরাগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল পরবর্তী সময়ে মলদ্বারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অথবা কোলেটারাল রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কয়েক বছর পর এগুলো পাইলস আকারে দেখা দিতে পারে।

অর্শ বা পাইলস রোগে করণীয় ঃ-
১- মলত্যাগের কুঅভ্যাস ত্যাগ করুন ঃ
( পাইলস রোগীদের তিনটি কুঅভ্যাস দেখা যায়। (১) যেভাবেই হোক প্রতিদিন অন্তত একবার পায়খানা করতে হবেই। এটি না হলে তারা সারাদিন শারীরিক ও মানসিক টেনশনে ভোগেন। (২) সকালবেলা প্রথমবার যখন মলত্যাগের বেগ হয় তখন তাতে সাড়া দেন না। (৩) পায়খানা ক্লিয়ার হয়নি ভেবে টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকেন এবং কোথ দেন যেন রেকটাম থেকে পায়খানা সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস, যদি সামান্য মল ভেতরে থেকে যায় তাহলে সারাদিন অস্বস্তিতে কাটাতে হবে। )
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি(প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা
৩. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
৬ . সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা
৭. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ বেশী গ্রহণ না করা
৮ . দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।
ধন্যবাদ ————— ( আপডেট — চলবে )

No comments:

Post a Comment