শ্যানক্রয়েড – Chancroid ( Soft chancre ) পর্ব – ২

Ref:// Centre for Sexual Health & HIV Research ( BMJ ) Royal College of General Practitioners ( UK ) , British Association for Sexual Health and HIV (BASHH ) BSMMU ( Bangladesh ) NCBI ( India ) Credetor — Dr.H Kamaly ( Hon PhD – PH & Med Journal — Final part )
শ্যানক্রয়েড বা নরম যৌনব্যাধিজনিত ক্ষত কি ?

অসুখটি হিমোফাইলাস ডুকরে ( Haemophilus ducreyi ) নামক ব্যাক্টোরিয়ার সংক্রামণে হয়ে থাকে যা যৌনবাহিত সংক্রমণ জাতীয় অসুখের একটি – অসুখটি বেশীর ভাগ তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমুহে দেখা যায় ( যেমন সাউথ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশে এর প্রাদুর্ভাব বেশী ইউরোপিয়ান দেশ সমুহে আবার খুব কম ) – অসুখ টি পুরুষ এবং মহিলার যৌনাঙ্গে যন্ত্রণাদায়ক ঘা দেখা দিলেও পুরুষের বেলায় ৮০% বেশী সংক্রামিত হয়ে থাকে ।
অসুখটি কাদের হয় ? কিভাবে হয় ?

অসুখটি ছোঁয়াচে রোগ নয় – ইহা শুধু মাত্র যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেই ছড়ায় – যেমন বাণিজ্যিক যৌনকর্মী , ভাসমান পতিতা , এবং বহু পুরুষে আসক্ত নারী- পুরুষদের বেশী হয়ে থাকে এবং তাদের সাথে সুস্থ ব্যাক্তির – যৌন সঙ্গম অথবা যৌনাঙ্গ চুম্বন, লেহন বা চোষা ইত্যাদি ক্রীড়ার মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে থাকে অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তির টোঠের লালা, যৌনি স্রাব ইত্যাদির সংস্পর্শে সুস্থ দেহে চামড়ার পুরানো ক্ষতের মাধ্যমে ও সংক্রামিত হতে পারে । গর্ভবতী মা সন্তান প্রসব করার সময় যদি উক্ত জীবাণু তার দেহে সক্রিয় থাকে তাহলে তার সদ্যজাত সন্তানের দেহে ও তা সংক্রামিত হবে – আমার দেখা অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি , যদি উক্ত পরিবেষে মদ, গাজা অথবা ড্রাগসের প্রভাব থাকে তা হলে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি শ্যানক্রয়েড অসুখটি এখানে আছেই !
খৎনা করানো পুরুষদের চেয়ে খৎনা না করানো পুরুষদের শ্যানক্রয়েড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি বিধায় যারা ক্রনিক শ্যানক্রয়েডে আক্রান্ত তাদের বেলায় বাধ্য হয়ে খৎনা করতেই হয় ।
লক্ষণ ঃ ( পুরুষদের বেলায় ) ঃ-

উপসর্গ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার ১২ ঘন্টা থেকে দু’সপ্তাহের ভিতর ছোট গোটা দেখা দেয়। একদিনের মধ্যে এটা ঘায়ে পরিণত হয়। ঘা বা ক্ষতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: আকার ৩ থেকে ৫০ মি.মি. (১/৮ ইঞ্চি থেকে দু’ইঞ্চি) হয়, ঘাটি ভীষণ যন্ত্রণা দায়ক হয় – ক্ষতের কিনারাগুলো তীক্ষ্ণ এবং নিচের দিকে দাবানো থাকে । কিনারাগুলো দেখতে অনিয়মিত বা এবড়ো থেবড়ো মনে হয় । গোড়া ধূসর কিংবা হলুদাভ ধূসর পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে। আঘাত লাগলে কিংবা পর্দা তুলে ফেললে গোড়া থেকে সহজেই রক্তপাত হয়। সংক্রমন টি ৫০% পুরুষের বেলায় একটি একক ঘা থাকে।
পুরুষের সংক্রামণ যে যে স্থানে দেখা দিতে পারেঃ – প্রাথমিক পর্যায়ে লিঙ্গের মাথার ত্বকে বেশি হয়ে থাকে যা দেখতে লিঙ্গের মাথার পেছনের কাটা খাঁজ থাকতে পারে- অনেক সময় লিঙ্গের সম্পূর্ণ অঞ্ছল সহ অন্ড থলির উপরের দিকে বিস্তৃতি ঘটতে পারে ( যা লিঙ্গের গোড়ার নিচ ভাগ ) । কখনো কখনো লিঙ্গের মাথার ছিদ্রের মধ্যেও দেখা যায়।
মহিলাদের বেলায় ঃ

মহিলাদের ক্ষেত্রে চার অথবা তার বেশি ঘা দেখা যায়, সেই সাথে অল্প কিছু উপসর্গ থাকে। ঘা গুলো নির্দিষ্ট জায়গাতে হলেও যোনির ক্ষুদ্র ওষ্ঠ বা ল্যারিয়া মেজরাতে বেশী আক্রান্ত হতে দেখা যায় । এ ছাড়া -ল্যারিয়া মাইনোরা, বৃহদ ওষ্ট (Labia minora ) চাঁদনি ( Vestibule ) , ভগাঙ্কুর ( Clitoris ) , পায়ু এলাকা ( পায়খানার রাস্থার মুখ ) এবং উরুর ভেতরের দিকে ( পাছা ) ঘা দেখা দিতে পারে । প্রথমিক লক্ষণ হিসাবে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা করা – যৌন মিলন এবং অন্ত্রের নড়া চড়া করার সময় ব্যথা এবং পরবর্তীতে অনেকের আক্রান্ত স্থান থেকে পুঁজ হয়ে ফেটে যেতে দেখা যায় সেই সাথে কিসিং আলসারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং কুঁচকির লসিকাগন্থিগুলো বড় হতে থাকে ।
প্রথমদিকে শ্যানক্রয়েডের ঘা-কে অনেকে ‘শক্ত’ শ্যাংকার বলে ভুল করতে পারেন ( প্রাথমিক সিফিলিসের বিশেষ ঘা ), – শ্যানক্রয়েডের ( ‘নরম শ্যাংকার’ ) – এর সম্পূর্ণ বিপরীত। – শ্যানক্রয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় এক- তৃতীয়াংশের কুঁচকির লসিকাগন্থিগুলো অনেক বড় হয়। অনেকের পুঁজ হয়ে ফেটে যায় যা অনেক সময় বোবিস বা বাগীরোগ হিসাবে দেখা দিয়ে থাকে ।
প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ঃ

সিডিসি অনুসারে , পি সি আর টেস্ট ফর এইচ-ডুকরে ( PCR test for H. ducreyi ) করে নিশ্চিত হওয়া গেলেও জীবাণুটি অনেক সিনথেটিক এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা যতক্ষণ না রোগীর ক্ষতের পুঁজ থেকে স্পেশিয়াল কালচার স্যান্সিটিভিটি না করা হয় -, অবশ্য সেই সাথে অন্যান্য জীবাণু জাতীয় অসুখের সন্দেহ করলে আপনার চিকিৎসক আনুষঙ্গিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারেন । পরীক্ষা টি একটু ব্যায়বহুল থাকায় আমার ব্যাক্তিগত মতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা তা না করেই সঠিক কালচার-একটিভ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে সুন্দর ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন ।
চিকিৎসা ঃ

( বিদ্রঃ মনে রাখবেন ইহা একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত অসুখ – যে কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেন না কেন এন্টি-বায়োটিক ছাড়া তা সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্বভ নয় )
প্রথমেই আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি বিবাহিত থাকেন তাহলে অবশ্যই উভয়ের একক মাত্রায় মুখে অ্যাজিথ্রোমাইসিন অথবা মাংসপেশি পথে একক মাত্রায় সেফট্রায়াক্সন অথবা সাত দিন মুখে ইরাথ্রোমাইসিন দিয়ে চিকিৎসকরা চিকিৎসা করে থাকেন – একি সাথে উভয়ের যৌন -মিলন ৯ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সুপারিস করা হয় অথবা কনডম ব্যাবহার করার কথা বলা হলেও ও উভয়ের যৌনাঙ্গ চুম্বন, লেহন বা চোষা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে ।
For the treatment of chancroid, the CDC recommends antibiotic therapy from 1 of 4 equally efficacious agents, as follows—
Azithromycin – 1 g orally (PO) as a single dose
Ceftriaxone – 250 mg intramuscularly as a single dose
Erythromycin base – 500 mg PO 3 times daily for 7 days
Ciprofloxacin – 500 mg PO twice daily for 3 days
Single-dose treatment has the advantage of observed compliance.
রুগী গর্ভবতী হলে Ceftriaxone ড্রাগস ব্যাবহারের সুপারিশ করা হয়ে থাকে ।
যদি ৭ দিন পর অসুখটির উন্নতি না হয় তা হলে অবশ্যই ক্লিনিক্যাল ম্যাথড অনুসারে অন্যান্য অসুখ যেমন, সিফিলিস, এইচ আইভি, যৌনাঙ্গে হারপিস ইত্যাদির জীবাণু সংক্রামিত কি না ? তা নিশ্চিত হতে হবে ( ৭০% সিফিলিস জাতীয় অসুখেই ভোগে থাকেন ) এবং সে অনুসারে তার ব্যাবস্থা নিতে হয় । তখন যদি সে জাতীয় কোন যৌন -রোগ না থাকে তাহলে অধিকাংশ সময় রোগীর ড্রাগস রেসিট্যান্ট ক্ষ্যামতা কমে গেছে বলে মনে করা হলে ড্রাগস কালচার সেন্সিটিভিটি করেই ঔষধ প্রয়োগ করলে শতভাগ নিশ্চিত ভাল হওয়ার –
আর যদি অন্যান্য যৌন জীবাণু থাকে তা হলে সে সময় দীর্ঘ স্তায়ি এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্ষ দিতে থাকেন বিশেশজ্ঞরা । একি সাথে লিম্প গ্রন্থি থেকে পুঁজ বের হলে অথবা ভাগিরোগ দেখা দিলে তার যথা যত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গ্রহন করার সুপারিশ করে থাকেন এবং প্রয়োজন মাইনর সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে । পুরুষের বেলায় খৎনা করানো না থাকলে তা করে নিতে হয় ।
জঠিলতা ঃ

সময়মত এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে , প্রস্রাবের রাস্থার ফ্যাস্টুলা ( প্রস্রাবের রাস্থার সাথে বাহিরের দিকে নালীর মত সংযোগ ) , পুরুষাঙ্গের স্থানীয় অচেতনতা সহ অন্যান্য মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে ………………। ধন্যবাদ ————-
সাবধানতা ঃ

যৌন মিলনের সাথী কে দেখতে আয়নার মত যতই পরিস্কার – পরিচ্ছন্ন বা পাক-পবিত্র মনে হয়না কেন ! , জীবাণু সংক্রামিতদের কে সেই আয়নায় দেখে, বুঝা উঠা – খুব কঠিন — তাই সাবধান !!!!
বহু ক্ষেত্রে যৌন সংক্রামক রোগের সঠিক কোনো চিহ্ন এবং উপসর্গ থাকে না। ফলে একজন পুরুষ অথবা একজন নারী বুঝতে পারে না , সে আদৌ কোন ধরণের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কিনা , বা অনেক সময় অনেকের যৌনাঙ্গে সামান্য ঘা দেখা দিলেও , সামান্য ক্রিম বা মলম ব্যবহারের পর প্রাথমিক অবস্থায় শুকিয়ে যায়, তখন অনেকে মনে করেন অসুখটি সেরে গেছে ইত্যাদি- কিন্তু যদি উক্ত ব্যাক্তি অবৈধ বা অজানা পরিবেষে যৌন- মিলন করে থাকেন আর তখন যৌনাঙ্গে ঘা, ফুস্কড়ি ইত্যাদি দেখা দেয় , তাহলে শত ভাগ নিশ্চিত তিনি যে কোন একটা যৌন- সংক্রামণ জাতীয় অসুখে আক্রান্ত হয়ে গেছেন- )
No comments:
Post a Comment