যৌন রোগ পর্ব – ৪ , গ্রেনুলোমা ইঙ্গুইনালি ( Granuloma inguinale -( STD – 4 )

ভুমিকা ঃ

গ্রেনুলোমা ইঙ্গুইনালি একটি যৌন সক্রামিত রোগ, এটি গ্রাম-নেগেটিভ ক্লে-ব্যাসিলা গ্রেনিলোমাইটিস নামক ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে । অনেক সময় একে ডনোভেনোসিস ( donovanosis ) ও বলা হয়ে থাকে । অসুখটি দক্ষিণ পূর্ব ভারত ও গিনিতে বেশী হলেও গ্রীষ্ম প্রদান অঞ্চল সহ পৃথিবীর সর্বত্র মাঝে মধ্যে দু একজন কে আক্রান্ত হতে দেখা যায় এবং তার মধ্যে যারা বিলাসী ভ্রমণ করতে গিয়ে বিলাসী পতিতাদের সাথে যৌন মিলন করেন তারাই বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকেন । পরবর্তীতে উক্ত ব্যাক্তির সাথে যৌন সম্পর্কের কারনে অন্যরা ও আক্রান্ত হয়ে থাকেন । নতুন রিসার্চ অনুসারে দেখা যায় উক্ত ব্যাক্টোরিয়া টি যে সকল দেশে সমকামী জাতীয় সহবাসের বৈধতা দেওয়া হয়েছে, সে সকল দেশেই আক্রমনের হার এখন খুব বেশী –
কিভাবে সংক্রামিত হয় ঃ

নারীপুরুষ উভয়ের হলেও পুরুষরা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকেন । বিশেষ করে যে সকল পুরুষ সমকামী, বিষমকামী ( যারা অন্য প্রানি অথবা শিশুদের সাথে যৌনতা করে ) তারাই এই অসুখটির দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে । প্যাথলজিক্যাল রিসার্চ অনুসারে দেখা যায় উক্ত ব্যাক্টেরিয়া সমুহ মলের সাথে থাকতে বেশী ভালবাসে , তাই এই অসুখটি যাদের হয়ে থাকে , তাদের কে Anal lover ( পায়ু-প্রেমিক ) বলে থাকেন অনেকই । জীবাণুটি যোনি বা এনাল সেক্সের মাধ্যমে সুস্থ ব্যাক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়লেও ওরাল সেক্সে ১ম স্থরে সংক্রামিত খুব কম হয়
লক্ষন ঃ

অসুখটি সংক্রামণের ১২ হতে ৯৫ দিনেরের ভিতর নিম্নের লক্ষন সমুহ দেখা দিতে পারে । আক্রান্ত স্থান পুঁজে ভরা, দেখতে গর্তের মত এবং দুর্গন্ধ ( Granulomas ), লিঙ্গ অথবা যোনিতে গুটি ( Genital nodules ), ), লিঙ্গ অথবা যোনিতে ঘা, লিঙ্গ অথবা যোনির সাদা স্রাবে দুর্গন্ধ অথবা রক্তপাত, খুব দ্রুত ফুস্কুড়ির মাংস বৃদ্ধি ( Fibrosis ), সমকামী অথবা বিষমকামীদের বেলায় মলদ্বার সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া ( Narrowing of anus ) , আক্রান্ত অঞ্ছলের তক বিনষ্ট হয়ে যাওয়া ও বর্ণের পরিবর্তন ( Necrosis of skin…), লালচে গোলাফি চামড়ার ক্ষত সমুহের প্যাচ – দেখতে চামড়ার চাইতে একটু উঁচু —-ইত্যাদি
সেই সাথে পরবর্তীতে – কুঁচকিতে ব্যথা ,যোনীপথে ব্যথা ,যোনিদ্বারে ক্ষত, যৌনাকাঙ্খা কমে যাওয়া, হাঁটুতে শক্ত পিণ্ড দেখা দেওয়া, মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক বৃদ্ধি কব্জিতে দুর্বল অনুভব করা , কাঁধ ফুলে যাওয়া, ঘাড়ের মাংসেপশীতে টান বা খিঁচুনি ইত্যাদি লক্ষণ সমুহ দেখা দিয়ে থাকে ।
১ম স্থরে ঃ

গ্রেনুলোমা ইঙ্গুইনালি বাক্টোরিয়ার সংক্রামিত ব্যাক্তির সাথে মিলনের ১ থেকে ১২ সপ্তাহের ভিতর পায়ুপথ ( যারা সমকামী ) লিঙ্গ বা যোনির আশে পাশে ( যারা স্ট্রেইট ) লাল আবা যুক্ত গোলাপী ফুস্কুড়ি দেখা দেয় এবং তখন দেখতে ছোট প্রদাহের মতই দেখায় অথচ ৯০% বেলায় তেমন ব্যাথা থাকেনা , কিছু কিছু মহিলাদের বেলায় যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরতে পারে । সাধারনত ২১ দিনের মাথায় যৌন মিলনের স্পর্শ কাতর অন্যান্য অঙ্গে ( ঠোঁট, জিহবার আগা, পাচা, কুঁচকি ইত্যাদি ) লাল ফুস্কুড়ি সমুহ দেখা দিয়ে থাকে যা ক্রমশ সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে ( কোমর এবং পায়ে ) । সেই সাথে আক্রান্ত স্থানের চর্মে রঙের ও পরিবর্তন হতে থাকে ।
২য় স্থরে ঃ-

২য় স্থরে ব্যাকটেরিয়া সমুহ যেখানেই আক্রান্ত করে সেখানেই ঘা করতে থাকে , বিশেষ করে পুরুষাঙ্গ, যোনি ও তার আসে পাশের অঞ্ছল , পায়ুপথের আশেপাশে , নিচ পেট, কুচকির চারপাশ এমন কি ঠোঁট বা পায়ের পাতা পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটতে পারে এবং সেই অঞ্ছল সমুহের স্পর্শ অনুভূতি ধ্বংস করতে থাকে অর্থাৎ টিস্যুগুলো এতে দুর্বল ও শিথিল হয়ে পরে যে শেষ পর্যন্ত যৌনাঙ্গের যৌন অনুভূতি পর্যন্ত বিলুপ্ত হতে পারে – । অনেক সময় অসুখটি ভাল হলেও স্নায়ুবিক অনুভূতি ( যৌন উক্তেজনা ) অনেক সময় আগের মত ঠিক হয়না । উক্ত প্রদাহের পুজ থেকে যে নোংরা গন্ধ বাহির হয় তা অনেকটা মৃত প্রাণীর গন্ধের মত ।
৩য় স্তরে ঃ-

২য় স্থরে যদি ঠিক মত চিকিৎসা না করা হয় ( পূর্ণ চিকিৎসা ) , তাহলে তা সাময়িক কিছুদিন থেকে কয়েক বছর পর ও দেখা দিতে পারে । দুঃখ জনক ভাবেই বলতে হয় ! তখন এটি গভীর মাংসপেশি কে ক্ষত করতে থাকে বা অনেক সময় তা থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের স্নায়ুবিক স্পর্শ কাতরাতা নস্ট করে দেয়,যাকে ওপেন জেনিট্যাল আলসার বলা হয় । তখন ছোট ফুস্করি সমুহ ক্রমশ বড় হতে থাকে কিন্তু বাহির থেকে দেখতে ইনফেকশন মনে হয়না । ৯০% বেলায় তখন আর সেই রোগের উপসর্গ থাকেনা বরং সিফিলিস, এইচ আইবি, গনরি ইত্যাদি যৌন রোগ সমূহের সাথে যুক্ত হয়ে এর লক্ষন অন্য ভাবে মোড় নেয় । মহিলাদের বেলায় পেলভিক অঞ্ছলের প্রদাহ জাতীয় অন্যান্য অসুখ এবং পুরুষদের বেলায় অণ্ডকোষের প্রদাহ জাতীয় অসুখ বৃদ্ধি পায় ।
বিদ্রঃ তৃতীয় স্থরে অসুখটি কমে গেলে ও স্থায়ী ভাবে লিঙ্গ অথবা যোনি এবং কুঁচকিতে চিরস্থায়ী ক্ষতের দাগ থেকে যাওয়া , যৌনাঙ্গে এলাকা ও কুচকির চামড়ার রঙ সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত ফোলা কোন অবস্তাতেই রুধ করা সম্বভ হয়না ।
জঠিলতা ঃ

যারা সমকামী তাদের বেলায় পায়খানার রাস্থার টিস্যু বৃদ্ধি পেয়ে শেষ পর্যন্ত পায়ুপথের ক্যান্সার অথবা গ্যাগ্ন্রিন জাতীয় কিছু হতে পারে-
স্ট্রেইটদের বেলায় – লিঙ্গের অগ্রভাগের টিস্যু বৃদ্ধি পেয়ে প্রস্রাবের নালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে – অথবা শেষ পর্যন্ত প্রস্রাব থলির ভিতর ও দেখা দিতে পারে । ৮৫% বেলায় অসুখটির শেষ স্থরে যৌন অঙ্গের ক্যান্সার জাতীয় অসুখ অথবা বন্ধ্যাত্ব অবধারিত ———!
ডায়াগনোসিস ঃ-

অসুখটির প্রথম স্থরে একেবারেই ধরা পরেনা বা ২য় স্থরের লক্ষন শ্যাঙ্ক্রয়েডের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ বিধায় তখন ও রোগটি নির্ণয় করা বেশ কঠিন হয়ে পরে — সে জন্য বিশেষজ্ঞরা অসুখটি সম্মন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আক্রান্ত অঙ্গের টিস্যু কালচার করার উপদেশ দিয়ে থাকেন অথবা ল্যাবরেটরিতে ( punch biopsy ) বায়োস্পি করালে তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া সম্বভ । সাথে সাধারন রক্ত পরিক্ষা সহ , এস আর এস ইত্যাদি পরিক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে , যদি অন্যান্য যৌনরোগের সন্দেহ করা হয় —
চিকিৎসা ঃ- ( সি ডি সি অনুসারে )

১ম ও ২য় স্থরের অসুখটি একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পূর্ণ ভাল হওয়া সম্বভ তবে তা কম পক্ষে ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে – তখন অনেক ক্ষেত্রে গ্র্যানুলেমা বা মাংসের পিন্ড সমুহ ছোট না হলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে বা ঘা শুঁকাতে দেরি হলে ড্রেইনেজের প্রয়োজন হতে পারে — ইত্যাদি
( ১ম স্তরে ৯৯% এবং ২য় স্থরে ৭০% ভাল হওয়া সম্বভ নিচের যে কোন একটি এন্টিবায়োটিকের পূর্ণ ডোজ সেবনে — সাথে ক্রিম- লোশন ইত্যাদির ব্যবহার সহ ভিটামিন স্বল্পতার ঔষধ সেবনের পরামর্ষ দেওয়া হয়ে থাকে- মনে রাখবেন পজেটিভ ব্যাক্টোরিয়া জনিত অসুখে এন্টিবায়োটিক ছাড়া অন্য কোন ঔষধ কাজ করবেনা বিধায় অন্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ না করাই ভাল এবং অবশ্যই অসুখটি কমে গেলেও এন্টিবায়োটিক সমূহের পূর্ণ ডোজ সেবন করে যাওয়া বাধ্যতা মুলক ? )
Azithromycin 1 g PO once a week or 500 mg/day for at least 3 weeks or until all lesions have completely healed
Erythromycin base 500 mg PO 4 times a day for at least 3 weeks or until all lesions have completely healed
Ciprofloxacin 750 mg PO twice a day for at least 3 weeks or until all lesions have completely healed
প্রতিরোধ ঃ

সমকামীতা, বিষমকামী ইত্যাদির অভ্যাস থাকলে তা থেকে দূরে থাকতে হবে । ( খৃস্টান প্রদান দেশ সমুহে সমকামী বিবাহ বৈধ বিধায় , সেই সব অঞ্চলে সমকামিদের বেলায় কনডম ব্যবহারের উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে ) – তা ছাড়া স্বামী স্ত্রী মধ্যে যে কোন একজন আক্রান্ত হলে উভয়য়ের চিকিৎসা সহ ৫৯ দিন সরাসরি যৌন মিলন না করাই উত্তম যদিও কনডম ব্যাবহারে জরুরী ক্ষেত্রে মিলন করার কথা বলা হয় । ধন্যবাদ —–
No comments:
Post a Comment